শাপলায় বিমোহিত সাতলার লাল শাপলার বিল

এ এইচ অনিক ।।

বরিশালঃ সৃষ্টির অপরুপ চিত্র সাতলার লাল শাপলার বিল। আজ যেখানে গাছ থেকে ধান ফুটে বেরোনোর অপেক্ষায় মাঠের পর মাঠ সবুজে সবুজে ছেয়ে আছে। ঠিক এইসব মাঠেই আর মাত্র তিন থেকে চার মাস পরেই দেখা মিলবে লাল শাপলার ফুলে ফুলে ভরা মাঠ। আর ফুলগুলো দেখতে হয়ে থাকে গাঢ় গোলাপি রঙের। তাছাড়াও গাছের পাতাগুলো দেখতেও অনেক বড় এবং সবুজ রংয়ের। শাপলা ফুলগুলো দেখতে শাপলার তুলনায় অনেক বড়।

এটি সবার কাছে লাল শাপলা বা রক্ত শাপলা নামেই পরিচিত। বছরের আষাঢ মাসের শুরু থেকে সাতলা সহো এলাকার সব বিলে নুতন পানির আবির্ভাব ঘটে । এর ফলে মাটির নিচে থাকা পুরানো শালুক বা শাপলার মোতা থেকে আবারও নুতন শাপলা গাছ ( শাপলার ফান) তৈরি হয়। এর কয়েক দিনের মধ্যেই লাল শাপলা ও তার ফুল ফুটতে শুরুকরে। ফুলগুলো প্রতিদিন সন্ধ্যার একটু আগেই ফুটতে শুরুকরে। আবার সকালে সুর্যের তাপ বৃদ্ধি পেলেই ফুলগুলো ধিরে ধিরে কলিতে পরিনত হয়। প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য শুধু খাতা কলমে লিখেই পাঠক ভাই বোনদের বোঝানো আমার পক্ষে অনেকটা কষ্টকর। তার কারন হলো এ সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনাকে আসত হবে, বরিশাল জেলাশহর থেকে ৬০ কিঃ পশ্চিমে উজিরপুর উপজেলার শেষ প্রান্ত, সাতলা ইউনিয়ন ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলার কয়েকটি বিল এসব বিলেও ফুটে লাল শাপলার ফুল। প্রতি বছরের এই একই সময়ে ফুটেতে শুরুকরে লাল শাপলার ফুল

এলাকার আলামদির বিল, পশ্চিম সাতলা, শিবপুর, পুর্বসাতলা পড়িবারি মুড়ি বাড়ির ও কুড়ালিয়া আশকোর বিলসহ প্রতিবেশী বাগধা ইউনিয়নের আশকোর সহ আরো কয়েকটি বিলে এসব লাল শাপলা ফুলের দেখা মিলবে। প্রতিদিন বিকেল হলেই ধিরে ধিরে সবুজ থেকে লাল রঙে পরিনত হয় বিল সহ পুরো জমির দৃশ্য । স্রষ্টার অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে এখানে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। মাত্র কয়েক বছর আগেও এলাকার যুবকেরা তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে শাপলা ফুলে ও অবহেলিত বিলাঞ্চল নামে পরিচিত সাতলাকে নিয়ে প্রচার প্রচারনা শুরু করে। তাদের ফেইসবুক পেজ সহ ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন। আর তখন থেকেই দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়াতে এর পরিচিতি পায়। যে-কারনে লাল শাপলা আজ বিশ্বের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। লাল শাপলা শুধু সাতলা নয়। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলা ও উপজেলা সহ ছাড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। এমন দৃশ্য দেখতে রাজধানী ঢাকা সহ দুর দুরান্ত থেকে আসতে শুরু করে প্রচুর দর্শনার্থী। স্থানীয় বাসিন্দা ডাঃ রেজাউল করিম আমাদের প্রতিনিধি কে বলেন শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়। লাল শাপলার রাজ্য সাতলাকে দেখতে ভারত সহ ভিনদেশি বিভিন্ন দেশের অনেক নাগরিকদের বা পর্যটকের দেখা মিলে আমাদের সাতলাতে এমনটাই আমাদের জানালেন মায়ের দোয়া ক্লিনিকের পরিচালক ডাঃ রেজাউল করিম।

এদিকে সাতলার লাল শাপলার সৌন্দর্য পরিদর্শনে এসেছিলেন বরিশাল জেলার ঊর্ধ্বতন  কর্মকর্তাগণ। তখন সাতলার লাল শাপলার সৌন্দর্য দেখে তারা মুগ্ধ হন এবং সাতলার লাল শাপলার বিলকে পর্যটন কেন্দ্রের ঘোষণাও দেন তৎকালীন বরিশাল জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। পাশাপাশি আগামীতে লাল শাপলার ফুল বৃদ্ধিসহ লাল শাপলার ফুল রক্ষায় ও দর্শনার্থীদের আশা যাওয়া ও তাদের নিরাপত্তার সম্পর্কিত করণীয় বা দিক নির্দেশনামূলক পরামর্শ দেন এবং দর্শনার্থীদের নৌকায় ভ্রমণে সকল নিরাপত্তা ও তাদের রাত্রী যাপনের জন্য নিরাপদ কটেজ তৈরী সহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আগামীতে শাপলা ফুলের বিল সাতলা হবে একটি পর্যটন কেন্দ্র। এমন আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত এর কিছুই চোখে পড়েনি। বিলের শাপলা গুলোতে নানা সমস্যার কারনে বর্তমানে শাপলা আগের তুলনায় কমে যাচ্ছে ও দিন দিন দর্শনার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে এলাকার অনেকে আমাদের প্রতিনিধির কাছে তাদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। যেমন শাপলার গাছ ও শাপলা নষ্টের প্রধান কারন হচ্ছে বিলে সাদা মাছের চাষ করা হয়, আর তা হলো, গ্রাস কাপ রুই কাতলা জাতীয় মাছ, এসব মাছেরা শুরু থেকেই শাপলার গাছ ও শাপলার ফুল খেয়ে ফেলে। যে কারনে আগের তুলনায় বিলে শাপলা ও এর ফুলের সংখ্যা কমহয়। অপরদিকে গৃহপালিত হাসঁ পালনকারিরা তাদের হাঁস ও হাসেঁর খাবার শামুক কুড়াতে নৌকা চালিয়ে শাপলার গাছ নষ্ট করে ফেলে। অন্যদিকে স্থানীয় পরিবার গুলো তরকারি হিসেবে লাল শাপলা ব্যাবহার করেন। অন্য সমস্যা হলো শাপলার ফুল ফুটলে ফুলে ফড়িং পঙ্গোপাল সহ নানা পোকা মাকড়ে ফুল ও ফুলের পাপড়ি খেয়ে ফেলে, এমন অনেক সমস্যার কথা বলেন এলাকাবাসী। সরজমিনে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর দবি শাপলার ফুল ও এর সৌন্দর্য রক্ষায় প্রশাসন সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন এলাকাবাসী। তাদের প্রধান দাবি হলো , অতিমুনাফা লোভী ও অসাধু কিছু মৎস্য চাষি তারা অবৈধ উপায়ে এসব বিলে শাপলার দুশমন ঐ জাতিয় মাছের পোনা ফেলে। বিলের শাপলা গাছ যেন নষ্ট করতে না পারে, এ বিষয়ে প্রশাসন সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি সাতলার সকল জনসাধারণের।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment